Recent

বাংলাদেশে তালাকের নিয়ম ( মুসলিম ও পরিবার আইন অনুযায়ী)

 

Md. Mahadi Hasan, Student of Law, Nsu
তালাক/ বিবাহ বিচ্ছেদ

তালাক বলতে মুলত বিবাহ বিচ্ছেদ কে বুঝানো হয়।বাংলাদেশে তালাক নিয়ে নানা ধরনের ভুল ধারনা রয়েছে।১৯৬১ সালের মুসলিম ও পরিবার আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী এসব ভূল ধারনা গুলোকে পরিস্কার করা হয়েছে। তালাক বিভিন্ন ভাবে হয়ে থাকে, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়া হয়, আবার স্ত্রী কর্তৃক স্বামী কে তালাক দেয়া হয়, তাছাড়াও জুডিশিয়াল ভাবে আদালতের মাধ্যমেও বিবাহ বিচ্ছেদ করা যায়।


তালাকের চলিত নিয়ম ( মুসলিম ও পরিবার আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১এর ধারা-৭ অনুযায়ীঃ

১। কোন পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চান, তাহলে তালাক ঘোষনার পর যত দ্রুত সম্ভব, চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত একটি নোটিশ প্রদান করিতে হবে এবং উক্ত নোটিশের অনুলিপি স্ত্রীকে সরবরাহ করতে হবে।

২। যিনি উপরোক্ত ১ নম্বর উপধারাটি অমান্য করবেন, সে জেল ও জড়িমানার সাজার যোগ্য হবেন। সর্বোচ্চ ১ বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ই।

৩। নিম্নের উপধারা-৫ ব্যবস্থাবলীর মাধ্যমে ব্যতীত প্রকাশ্য অথবা অন্যভাবে প্রদত্ত কোন তালাক, পুর্বেই বাতিল/সমঝোতা না হলে উপ ধারা- ১ অনুযায়ী চেয়ারম্যান কর্তৃক নোটিশ প্রাপ্তির ৯০দিনের আগে কার্যকর হবেনা।

৪। উপধারা-১ অনুযায়ী, নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদয়ের মাঝে আপোষ/মিমাংসা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালীশী পরিষদ গঠন করবেন এবং বিষয়টি মিমাংসা/সমঝোতা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

৫।তালাক ঘোষনাকালে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে বা আন্তঃ স্বত্বা থাকলে  উপধারা- ৩ এ উল্লেখিত সময় অথবা গর্ভের সন্তান জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবেনা। 

৬।এই ধারা অনুযায়ী, তালাক দ্বারা যার সম্পুর্ন রুপে বিবাহ বিচ্ছদ সম্পন্ন হয়েছে, সে জাতীয় তালাক তিন বার কার্যকরী না হলে কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে বিবাহ না করে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করিতে পারিবেন। 

অতঃপর তালাক হয়ে গেলে, তালাক রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।



স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাকের ক্ষেত্রেঃ বিভিন্ন ভাবে তালাক দিতে পারেন, 

১। তালাক-ই- তৌফিজ ঃ নিকাহ নামার ১৮ নম্বর ঘরে, স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেন, সে ক্ষেত্রে উক্ত ক্ষমতার কারণে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে মুসলিম ও পরিবার আইন অধ্যাদেশের,১৯৬১  ৭ ধারায় বর্নিত নিয়ম অনুসরন করতে হবে।

২। খুলা তালাকঃ স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে আলোচনার সাপেক্ষে যে তালাক হয়, তাকে খুলা তালাক বলে। 
এক্ষেত্রে স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীকে রাজী করানো। এরকম তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রী ই চেয়ারম্যানের নিকট নোটিশ প্রেরণ করিবেন। মুসলিম ও পরিবার আইন অধ্যাদেশের,১৯৬১  ৭ ধারায় বর্নিত নিয়ম অনুসারে।

৩। আদালতের মাধ্যমে তালাক কার্যকরঃউপরোক্ত ২ নিয়মে তালাক সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে, আদালতের মাধ্যমে তালাক কার্যকর করতে হয়।  স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দিলে কোন কারন দেখাতে হয় না, কিন্তু স্ত্রী কর্তৃক স্বামী কে তালাক দিতে হলে কিছু সুস্পস্ট কারণ দেখাতে হবে যামুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ এর ধারা-২ এ বর্ণিত হয়েছে। উক্ত কারণ সমুহ নিম্নরুপঃ

১। চার বছর বা এর অধিক সময় ধরে স্বামীর কোন খোঁজ না থাকলে অর্থাৎ নিরুদ্দেশ থাকিলে।

২। ২ বছর স্বামী স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে।

২(ক) , স্বামী মুসলিম ও পরিবার আইন অধ্যাদেশের,১৯৬১ নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করিলে।

৩। স্বামীর ৭ বছর কিংবা এর অধিক মেয়াদী কারাদন্ড সাজা হলে।

৪। স্বামী কোন কারণ ব্যতীত ৩ বছর যাবত দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।

৫। বিয়ের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করার সময় পর্যন্ত বজায় থাকলে।

৬। স্বামী ২ বছরের বেশী সময় ধরে, পাগল অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে বা মারাত্নক উপদংশ রোগে ভুগলে।

৭। বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা বা অবিভাবক যদি ১৮ বছরের আগেই মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটির বয়স ১৮ হওয়ার পর উক্ত বিবাহ অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, উল্লেখ্য যে, দাম্পত্য সম্পর্ক না হলে তখন ই মেয়েটি বিবাহ অস্বীকার করে আদালতের ডিক্রি চাইতে পারে।

৮। স্বামীর নিষ্ঠুর ব্যবহারের জন্য-----
(ক)  অভ্যাসগত ভাবে স্ত্রীকে আঘাত করলে বা নিষ্ঠুর আচরন করলে, উক্ত আচরন দৈহিক নির্যাতন না হলেও মানসিক বা তার জীবন কে শোচনীয় করে তুলেছে এমন হতে পারে।

(খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবনযাবন বা মেলামেশা করলে।

(গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করলে।

(ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নস্ট করলে বা স্ত্রীকে তার সম্পদের অধিকার প্রয়োগে বাধা দিলে।

(ঙ) স্ত্রীকে ধর্মীয় ইবাদত পালনে বাধা প্রদান করিলে।

(চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সবার সাথে সমান ব্যবহার না করিলে।

(ছ) এছাড়া এমন যে কোন কারণে যা মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী বৈধ হিসেবে গণ্য হয়।

উল্লেখ্য যে, উপধারা- ৩ অনুযায়ী যতক্ষন পর্যন্ত স্বামীর জেল সাজা চুড়ান্ত না হয়, ততক্ষন পর্যন্ত আদালত তালাকের ডিক্রী প্রদান করিবেন না। 

আরো উল্লেখ্য যে, উপধারা- ১ অনুযায়ী কোন স্বামী নিরুদ্দেশ থাকায় কোন তালাকের ডিক্রী হলে তা ডিক্রী হওয়ার পরবর্তী ৬ মাস পর্যন্ত কার্যকর হবেনা, যদি স্বামী নিজে উপস্থিত হয়ে বা কোন অনুমোদিত প্রতিনিধি দ্বারা আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেন যে, তিনি দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত; সেক্ষেত্রে আদালত উক্ত ডিক্রী বাতিল করিবেন।

উপধারা- ৫ অনুযায়ী স্বামী যদি আদালতে আবেদন করেন যে, ১ বছরের মধ্যে তিনি পুরুষত্বহীন তার সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন এবং উক্ত সময়ের মধ্যে যদি তিনি আদালত কে এই বিষয়ে সন্তুষ্ট করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আদালত উপধারা-৫ অনুযায়ী কোন ডিক্রী প্রদান করিবেন না। 


Reffrences: 

                1. http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-305.html
                2. http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-180/section-4813.html



Acknowledgment

All publications on this website are only for educational purposes. So if there is any unintentional mistake, please forgive me and let me know, so that I can correct it. I always respect and obey the law of Bangladesh.